ন্যাপথলিন- আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি পরিচিত নাম। ঘরোয়া কাজ থেকে শুরু করে শিল্পকারখানা পর্যন্ত, ন্যাপথলিনের ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক। এটি কাপড়, বইপত্র, এবং গুদামজাত পণ্য সংরক্ষণে পোকামাকড় প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর তীব্র গন্ধ এবং অ্যারোমেটিক বৈশিষ্ট্য একদিকে যেমন এটি উপকারী করে তুলেছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। তাই ন্যাপথলিন ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি।
এ ব্লগে আমরা ন্যাপথলিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানব—এর কাজ, ব্যবহার পদ্ধতি, উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক। পাশাপাশি এর বিষাক্ততার কারণ এবং সুরক্ষিত ব্যবহারের উপায় নিয়েও আলোকপাত করব। যারা ন্যাপথলিনের কার্যকারিতা নিয়ে আরও গভীরভাবে জানতে চান, এই লেখাটি তাদের জন্য একটি সঠিক গাইড।
ন্যাপথলিন সম্পর্কে বিস্তারিত
ন্যাপথলিন কি?
ন্যাপথলিন একটি অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন যা প্রধানত কয়লা টার ও পেট্রোলিয়াম থেকে প্রাপ্ত। এটি সাদা রঙের স্ফটিক আকৃতির একটি কঠিন পদার্থ, যা সহজেই বাষ্পে পরিণত হয় এবং তীব্র গন্ধ উৎপন্ন করে। ন্যাপথলিন মূলত বিভিন্ন কীটনাশক এবং ঘরবাড়ির সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
ন্যাপথলিন এর গাঠনিক সংকেত
ন্যাপথলিনের রাসায়নিক সংকেত C₁₀H₈। এটি দুটি ফিউশনযুক্ত বেঞ্জিন রিং দ্বারা গঠিত। এর কাঠামোতে অ্যারোমেটিক বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি রাসায়নিকভাবে স্থিতিশীল এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
ন্যাপথলিন কিভাবে তৈরি হয়?
ন্যাপথলিন সাধারণত কয়লা টার থেকে নির্যাসের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। কয়লার উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তাপ দিলে কয়লা টার উৎপন্ন হয়, যা থেকে ন্যাপথলিন পৃথক করা হয়। এছাড়াও, পেট্রোলিয়াম ক্র্যাকিং প্রক্রিয়াতেও ন্যাপথলিন তৈরি করা সম্ভব।
ন্যাপথলিন এর কাজ:গুরুত্বপূর্ণ দিক
১. কাপড় সংরক্ষণ
ন্যাপথলিন কাপড়ের আলমারিতে পোকামাকড়, বিশেষ করে ছারপোকা, থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কীটনাশক হিসেবে কার্যকর, কারণ এর তীব্র গন্ধ পোকামাকড়কে দূরে রাখে।
২. বইপত্রের সুরক্ষা
পুরনো বই, পত্রিকা বা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষণে ন্যাপথলিন ব্যবহৃত হয়। এটি কাগজ পোকা এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে বই রক্ষা করে।
৩. গৃহস্থালির কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ
ন্যাপথলিন ঘরের কোণা, বেসিন বা রান্নাঘরে পোকামাকড় প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়। এটি তেলাপোকা, পিঁপড়া এবং অন্যান্য ছোট পোকামাকড় তাড়াতে সহায়ক।
৪. শৌচাগার এবং বাথরুমে ব্যবহার
ন্যাপথলিন শৌচাগার ও বাথরুমে গন্ধ কমানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এটি সুরক্ষার জন্য সহজ ও কার্যকরী সমাধান।
৫. রাবার এবং প্লাস্টিক শিল্পে ব্যবহার
ন্যাপথলিন রাবার এবং প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা পণ্যের স্থায়িত্ব এবং মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
৬. ডাই এবং রাসায়নিক উৎপাদনে
ন্যাপথলিন বিভিন্ন ধরণের ডাই, রং, এবং রাসায়নিক পদার্থ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি শিল্পে বিভিন্ন অ্যারোমেটিক যৌগ উৎপাদনের জন্য একটি মূল উপাদান।
৭. কীটনাশক এবং ফাঙ্গি প্রতিরোধক
ন্যাপথলিন ফাঙ্গি প্রতিরোধে এবং কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কৃষিক্ষেত্রে এবং গুদামজাত পণ্যের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
৮. ফার্নিচার রক্ষায় ব্যবহার
কাঠের আসবাবপত্রে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ন্যাপথলিন কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৯. জুতার রক্ষায়
চামড়ার জুতা ও ব্যাগ সংরক্ষণে ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয়। এটি পোকা ও ফাঙ্গি থেকে জিনিসপত্র রক্ষা করে।
১০. মাছ ধরার ফাঁদে
ন্যাপথলিনের তীব্র গন্ধ কিছুক্ষেত্রে মাছ ধরার ফাঁদে মাছ আকৃষ্ট করতে ব্যবহৃত হয়।
১১. কৃষি জমির পোকা দমনে
মাটির কীটপতঙ্গ দমনে কৃষিক্ষেত্রে ন্যাপথলিনের ব্যবহার দেখা যায়। এটি ক্ষতিকারক পোকাগুলো ধ্বংস করে জমির উর্বরতা ধরে রাখতে সহায়ক।
১২. গুদামে শস্য সংরক্ষণ
গুদামজাত ধান, চাল বা অন্যান্য শস্যে পোকা আক্রমণ ঠেকাতে ন্যাপথলিন রাখা হয়।
১৩. জাহাজ এবং পণ্যবাহী কন্টেইনারে
ন্যাপথলিন জাহাজ এবং পণ্যবাহী কন্টেইনারে কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে ব্যবহার করা হয়।
১৪. পোকামাকড়ের বংশ বিস্তার রোধে
ন্যাপথলিন শুধু কীটপতঙ্গ তাড়ায় না, এটি তাদের বংশবৃদ্ধিও রোধ করে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
তবে ব্যবহার করার সময় সঠিক সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
ন্যাপথলিন এর উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক
ন্যাপথলিন এর উপকারিতা
- কীটপতঙ্গ ধ্বংস: কাপড়, বই এবং অন্যান্য সামগ্রীকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
- ঘরের সুরক্ষা: ছোট ছোট গর্ত বা স্থান থেকে পোকা-মাকড় তাড়াতে কার্যকর।
- শিল্পে ব্যবহার: রাবার, প্লাস্টিক এবং রাসায়নিক শিল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ন্যাপথলিন এর ক্ষতিকর দিক
- বিষাক্ততা: দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা এবং রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে।
- পরিবেশগত ক্ষতি: ন্যাপথলিন পরিবেশে মিশে জল ও বায়ু দূষণ ঘটায়।
- অ্যালার্জি: ত্বকের সংস্পর্শে এলে বা গন্ধ নিলে ত্বক ও নাসারন্ধ্রে সমস্যা হতে পারে।
ন্যাপথলিন নিয়ে যত প্রশ্ন
ন্যাপথলিন কি স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ?
ন্যাপথলিন ব্যবহারে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের সংস্পর্শে থাকলে শ্বাসকষ্ট, ত্বকের জ্বালা, চোখে জ্বালা এবং বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। বিশেষত শিশুদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ন্যাপথলিন খেলে কি হবে?
ন্যাপথলিন গিলে ফেললে বিষক্রিয়া ঘটতে পারে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন ভেঙে দেয়, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহণে সমস্যা তৈরি করে। শিশু বা পোষা প্রাণীর জন্য এটি মারাত্মক বিপজ্জনক।
ন্যাপথলিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ন্যাপথলিনের প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ত্বকের জ্বালাপোড়া
- শ্বাসকষ্ট
- মাথা ঘোরা
- রক্তাল্পতা
- দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি
ন্যাপথলিন কি বিষাক্ত?
ন্যাপথলিন একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটি খেলে অথবা দীর্ঘক্ষণ এর গন্ধ গ্রহণ করলে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই এটি ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
ন্যাপথলিন এর ব্যবহার এবং দাম
ন্যাপথলিন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়:
১. আলমারিতে পোকামাকড় দূর করতে
আলমারির কোণায় বা কাপড়ের মাঝখানে ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। এটি পোশাককে ছারপোকা এবং অন্যান্য পোকামাকড় থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে ন্যাপথলিন সরাসরি কাপড়ের উপর না রাখাই ভালো, কারণ এটি কাপড়ের গন্ধ বা দাগ ফেলতে পারে।
২. বইপত্র সংরক্ষণে
পুরনো বই বা নথিপত্র সংরক্ষণে বইয়ের শেলফ বা বাক্সের মধ্যে কয়েকটি ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। এটি কাগজ পোকা এবং আর্দ্রতার কারণে ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে।
৩. শৌচাগার ও বাথরুমে ব্যবহার
শৌচাগার বা বাথরুমের কোণায় ন্যাপথলিন বল রাখলে তীব্র গন্ধ দূর হয় এবং কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ হয়। বিশেষত ড্রেনপাইপের আশেপাশে এটি ব্যবহার করলে তেলাপোকা আসা বন্ধ হয়।
৪. পোকামাকড় প্রতিরোধে ঘরের কোণায়
ঘরের কোণায় বা যেখানে পোকামাকড়ের প্রবেশ বেশি হয়, সেখানে ন্যাপথলিন বল রেখে দিন। এটি তেলাপোকা, পিঁপড়া, এবং ছোট পোকামাকড় দূরে রাখে।
৫. কৃষি জমিতে ব্যবহার
কৃষিক্ষেত্রে মাটির পোকামাকড় দূর করতে মাটির উপরে বা চারার কাছাকাছি ন্যাপথলিন রাখা যেতে পারে। তবে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ এটি মাটির পুষ্টি নষ্ট করতে পারে।
৬. গুদামজাত শস্য সংরক্ষণে
ধান, চাল বা অন্যান্য শস্যের গুদামে ন্যাপথলিন বল রাখলে শস্যে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে। তবে ন্যাপথলিন সরাসরি শস্যে না রেখে একটি কাগজ বা প্লাস্টিকে পেঁচিয়ে রাখতে হবে।
৭. জুতা ও ব্যাগ সংরক্ষণে
জুতা বা চামড়ার ব্যাগে ন্যাপথলিন রেখে দিলে এগুলো ফাঙ্গি ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা পায়। তবে ন্যাপথলিন সরাসরি জুতার ভেতর না রেখে ছোট কাপড়ে পেঁচিয়ে ব্যবহার করা ভালো।
৮. রাবার এবং প্লাস্টিক পণ্যে ব্যবহার
রাবার বা প্লাস্টিক পণ্য সংরক্ষণে ন্যাপথলিন ব্যবহার করলে এগুলো দীর্ঘদিন ভালো থাকে এবং ফাঙ্গি বা পোকামাকড়ের ক্ষতি থেকে বাঁচে।
ব্যবহারের সতর্কতা:
- ন্যাপথলিন শিশু ও পোষা প্রাণীর নাগালের বাইরে রাখুন।
- ন্যাপথলিন ব্যবহারের পর হাতে গ্লাভস বা হাত পরিষ্কার করুন।
- ন্যাপথলিন বেশি ব্যবহার করলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে, তাই সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করুন।
এভাবে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতিতে ন্যাপথলিন ব্যবহার করলে এটি উপকারী ফলাফল দেয়।
ন্যাপথালিন সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
ন্যাপথলিন এর দাম কত?
ন্যাপথলিনের দাম স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের একটি প্যাকেটের দাম প্রায় ৩০-৫০ টাকা। এটি সাধারণত স্থানীয় দোকান বা সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়।
ন্যাপথলিন কোথায় পাওয়া যায়?
ন্যাপথলিন সাধারণত কেমিক্যাল স্টোর, বাজারের হার্ডওয়্যার দোকান বা সুপার শপে পাওয়া যায়। এছাড়া, অনলাইনেও এটি সহজেই অর্ডার করা যায়।
ন্যাপথলিন এর গন্ধ ক্ষতিকর কি?
ন্যাপথলিনের গন্ধ দীর্ঘক্ষণ গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি মূলত এর অ্যারোমেটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ঘটে।
ন্যাপথলিন কি থেকে তৈরি হয়?
ন্যাপথলিন সাধারণত কয়লা টার বা পেট্রোলিয়ামের ডিস্টিলেশন প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হয়। কয়লা টার হলো কয়লা উত্তপ্ত করার সময় নির্গত হওয়া তরল পদার্থ, যা বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগের উৎস। পেট্রোলিয়ামের ক্র্যাকিং প্রক্রিয়াতেও ন্যাপথলিন উৎপন্ন হয়, যেখানে ভারী হাইড্রোকার্বনকে ভেঙে হালকা যৌগ তৈরি করা হয়।
ন্যাপথলিন একটি অ্যারোমেটিক যৌগ কেন?
ন্যাপথলিনের কাঠামোতে দুটি সংযুক্ত বেঞ্জিন রিং থাকে, যা অ্যারোমেটিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে। এই কাঠামোর কারণে এটি স্থিতিশীল এবং তীব্র গন্ধযুক্ত। অ্যারোমেটিক যৌগগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য যেমন: বেনজিন রিং উপস্থিতি এবং গন্ধের তীব্রতা—ন্যাপথলিনেও পাওয়া যায়।
ন্যাপথলিন এর রাসায়নিক নাম
ন্যাপথলিনের রাসায়নিক নাম হলো পলি–সাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন। এর সাধারণ সূত্র C₁₀H₈, যা এর কাঠামোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
কর্পূর এবং ন্যাপথলিন কি এক?
কর্পূর এবং ন্যাপথলিন আলাদা রাসায়নিক পদার্থ। কর্পূর হলো প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত একটি জৈব যৌগ, যা প্রধানত কর্পূর গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অন্যদিকে, ন্যাপথলিন একটি সিনথেটিক যৌগ যা কয়লা টার থেকে তৈরি হয়। এদের গন্ধে কিছুটা মিল থাকলেও রাসায়নিক গঠনে তারা ভিন্ন।
ন্যাপথলিন কি বিষাক্ত?
হ্যাঁ, ন্যাপথলিন বিষাক্ত। এটি শরীরে প্রবেশ করলে রক্তাল্পতা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষত শিশু এবং পোষা প্রাণীর জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। তাই এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
ন্যাপথলিন এর গন্ধ ভালো লাগে কেন?
ন্যাপথলিনের তীব্র গন্ধ মানুষের নাকের ঘ্রাণ গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, যা কিছু মানুষের কাছে আরামদায়ক মনে হতে পারে। তবে এটি দীর্ঘক্ষণ শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
ন্যাপথলিন খেলে কি হয়?
ন্যাপথলিন খেলে তা হজমতন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি ঘটায়। এর ফলে তীব্র বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শারীরিক উপসর্গ হিসেবে বমি, তীব্র পেটব্যথা, রক্তাল্পতা এবং অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
ন্যাপথলিন শুকলে কি হয়?
ন্যাপথলিন শুকলে এটি ফুসফুসের ভেতরে গিয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। এটি শ্বাসনালীতে জ্বালাপোড়ার কারণ হয় এবং শ্বাসকষ্ট বা অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়ায়।
গাছে ন্যাপথলিন দিলে কি হয়?
ন্যাপথলিন গাছে দিলে এটি মাটির পোকা বা কীটপতঙ্গ ধ্বংস করতে পারে। তবে অতিরিক্ত ন্যাপথলিন ব্যবহারে মাটির পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
ন্যাপথলিন এর ব্যবহার
ন্যাপথলিন প্রধানত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি কাপড়, বইপত্র, এবং অন্যান্য ঘরোয়া সামগ্রীর পোকামাকড় থেকে সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও শিল্পে প্লাস্টিক, রাবার এবং ডাই প্রস্তুতিতে ন্যাপথলিনের ব্যবহার রয়েছে।
ন্যাপথলিন কি কাজে লাগে?
- পোশাক ও কাপড় সংরক্ষণে
- ঘরে পোকামাকড় প্রতিরোধে
- বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে
- রাবার ও প্লাস্টিকের কাঁচামাল হিসেবে
ন্যাপথলিন এর স্ফুটনাংক কত?
ন্যাপথলিনের স্ফুটনাংক প্রায় ২১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি অপেক্ষাকৃত উচ্চ তাপমাত্রায় বাষ্পে রূপান্তরিত হয়।
ন্যাপথলিন এর গলনাংক কত?
ন্যাপথলিনের গলনাংক প্রায় ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় এটি কঠিন থেকে তরলে রূপান্তরিত হয়।
ন্যাপথলিন এসিটিক এসিড কি?
ন্যাপথলিন এবং এসিটিক এসিড এক নয়। এসিটিক এসিড একটি জৈবিক কার্বন যৌগ, যা খাদ্যদ্রব্য এবং পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ন্যাপথলিনের তুলনায় এসিটিক এসিডের গন্ধ হালকা এবং এটি বিষাক্ত নয়।
উপসংহার
ন্যাপথলিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কীটনাশক এবং অন্যান্য কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটি ব্যবহারে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এর ক্ষতিকর দিকগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা এবং নিরাপদে সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা এর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারি।
FAQ (Frequently Asked Questions)
১. ন্যাপথলিন কি?
ন্যাপথলিন একটি অ্যারোমেটিক যৌগ, যা প্রধানত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সাদা রঙের ছোট বলের মতো কঠিন পদার্থ, যা কাপড়, বই, এবং গুদামজাত পণ্য থেকে পোকামাকড় দূরে রাখতে কার্যকর।
২. ন্যাপথলিন কি বিষাক্ত?
হ্যাঁ, ন্যাপথলিন বিষাক্ত। এটি শ্বাসপ্রশ্বাস, ত্বকের সংস্পর্শ, বা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। বিশেষত শিশু এবং পোষা প্রাণীর জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. ন্যাপথলিন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
ন্যাপথলিন সাধারণত কাপড়ের আলমারি, বইয়ের শেলফ, এবং শৌচাগারে পোকামাকড় প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সরাসরি কোনো খাদ্য বা ত্বকের সংস্পর্শে না এনে নিরাপদ জায়গায় রাখা উচিত।
৪. ন্যাপথলিন এর গন্ধ কি ক্ষতিকর?
ন্যাপথলিনের তীব্র গন্ধ দীর্ঘক্ষণ শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে গন্ধ গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।