যে পতঙ্গটি দেখলে প্রায়শই মেয়েরা অনেকটা ভয়ার্ত চিৎকারে দিক বিদিক লাফাতে থাকেন তার নাম হলো তেলাপোকা।  ইংরেজীতে যাকে বলা হয় cockroach। এই তেলাপোকার কিন্তু বৈজ্ঞানিক আলাদা একটা নামও রয়েছে – Periplaneta Americana । আর্থ্রোপোডা পর্বের এই প্রাণীটি নিয়ে কতোটা জানি আমরা? কেউ হয়ত কিছুটা জানি, কেউ একদমই জানি না। আজ আমরা এই পতঙ্গের আদ্যপান্ত জানবো।

তেলাপোকা কোথায় থাকে

এদের বিস্তার সারা পৃথিবীতেই। তেলাপোকা মূলত স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার,কিন্তু উষ্ণ জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। তাদের প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ফাটলে, সিঙ্কের নীচে, যন্ত্রপাতির পিছনে এবং অন্যান্য অন্ধকার ও নির্জন এলাকায় লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। আমাদের বাসাবাড়ির রান্নাঘর যে এদের প্রিয় স্থান সেটা বলাই বাহুল্য। এছাড়াও, হোটেল, বেকারি, রেস্তোরাঁ, গুদাম, মুদির দোকান, নর্দমা, জাহাজ এবং পাবলিক ল্যাট্রিন ইত্যাদিতে এদেরকে দেখা  যায়, যেখানে প্রচুর খাবার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এদের আরেকটি উপযুক্ত বাসস্থান হচ্ছে খাদ্য মালবাহী জাহাজ। তেলাপোকা একটি নিশাচর প্রাণী। এরা দিনের বেলা বিভিন্ন গর্ত ও ফাটলে লুকিয়ে থাকে এবং রাতে বের হয়ে আসে যখন। এরা প্রায়ই বিভিন্ন জিনিস যেমন জামাকাপড়, জুতা, বই, মানুষের খাবারের স্বাদ নেয়।

তেলাপোকার জন্ম কিভাবে হয় দেখুন! তেলাপোকার জীবনচক্র || Life Cycle Of Cockroach In Bangla 

তেলাপোকা কি খায়?

তেলাপোকা খাদ্যাভ্যাস: এরা সর্বভুক বলে ৩৫ কোটি বছর ধরে প্রকৃতির খাদ্যাভাব ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। কিন্তু আপনারা কি জানেন, তেলাপোকা কোন অঞ্চলগুলোতে বেশি সেই অঞ্চলে থাকতে বেশি পছন্দ করে? এরা সেখানেই আকৃষ্ট হয় যেখানে খাবার সহজলভ্য। তারা রূটির ছোট ছোট টুকরা, আবর্জনা, এমনকি বিভিন্ন ধরনের জৈব উপকরণ খায়। মোটকথা এরা উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণিজ সব ধরনের খাবার গ্রহণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সিমেন্ট ও সিমেন্টজাত পণ্য ছাড়া বাকি সব কিছুই তেলাপোকা খায়। এমনকি মানুষের দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বাদ দেয় না। পরিবেশে খাবারের অভাব দেখা দিলে তারা একে অপরকে খেয়ে বেঁচে থাকে। আমাদের দেশের প্রধান দুটি তেলাপোকা প্রজাতির নাম: Periplanata americana এবং Blatta orientals।

তেলাপোকার প্রকারভেদ :

আপনারা হয়ত অনেকেই জানেন না যে পৃথিবীতে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ প্রজাতির তেলাপোকা আছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৩০ প্রজাতি মানুষের আশপাশে ঘরবাড়িতে থাকে এবং এদের মধ্যে মাত্র ৪ প্রজাতি প্রধানত মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আসুন, তেলাপোকার সবথেকে পরিচিত কিছু প্রজাতির সাথে একটু চেনা জানা হয়ে যাক –

Telapoka Cockroach তেলাপোকা Animal life

আমেরিকান তেলাপোকা (Periplaneta americana):
এর আফ্রিকা ও  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। তারা প্রায় ১.৬ থেকে ২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং এরা লাল-বাদামী বর্ণ বিশিষ্ট।

মজার ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকান তেলাপোকা সর্বভুক প্রজাতির এবং সুবিধামত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য – রুটি, মানুষের চুল, চামড়া, মৃতদেহ, কাগজ এবং এমনকি মল-এর মতো পদার্থও খায়। দুর্ভাগ্যবশত সত্যি যে, খাবারের সংস্পর্শে এলে এরা রোগ ও ভাইরাসও ছড়াতে পারে।

জার্মান তেলাপোকা (Blattella Germanica) :

জার্মান তেলাপোকা হচ্ছে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, মুদি দোকান, রেস্তোঁরা এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোর আশেপাশে পাওয়া যায় সবচেয়ে সাধারণ এক প্রকার তেলাপোকা। এগুলো হালকা ক্যারামেল রঙের হয় যার মাথার পিছনে দুটো গাঢ়, উল্লম্ব ডোরা থাকে। পূর্ণ বয়স্ক হলে প্রাপ্তবয়স্কদের আকার প্রায় এক পয়সার মতো দেখতে হয়। জার্মান তেলাপোকা সারা বছর তাদের ভিতরে ডিম বহন করে এবং অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় দ্রুত পরিপক্ক হয়, আদর্শ অবস্থায় পরিপক্কতা পেতে মাত্র ৩৬ দিন লাগে।

ফ্লোরিডা উডস তেলাপোকা (Eurycotis floridana) :
এই তেলাপোকাগুলোকে ফ্লোরিডা এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পাওয়া যায়। এই বড় তেলাপোকাগুলো গাঢ় বাদামী বা কালো রঙের হয়ে থাকে। এরা সাধারণত বনাঞ্চলে বাস করে।

অস্ট্রেলিয়ান তেলাপোকা (Periplaneta australasiae) :
এই তেলাপোকাগুলো লালচে-বাদামী এবং প্রায় ১.২ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তারা বাসস্থান হিসেবে সাধারণত বাগান এবং কাঠের স্তূপের মতো বহিরঙ্গনকেই পছন্দ করে। তবে ঘর বাড়িতেও সচরাচর ঢুকে এরা। খাদ্য উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে সাধারণত উদ্ভিদ, তৃণ গুল্ম জাতীয় উপকরণগুলো।

এশিয়ান তেলাপোকা (Blattella asahinai) :
এরা দেখতে জার্মান তেলাপোকার মতো। এশিয়ান তেলাপোকা বাইরের আলোতে আকৃষ্ট হয় বেশি। এরা দিনের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে এবং উড়তে পারে। তাদের খাদ্য তালিকায় উদ্ভিদ উপাদান ও পোকামাকড় অন্তর্ভুক্ত।

ব্রাউন-ব্যান্ডেড তেলাপোকা (Supella longipalpa) :
এই তেলাপোকাগুলোর ডানা এবং পেট জুড়ে হালকা বাদামী রঙের দাগ থাকে। তারা উষ্ণ ও শুষ্ক পরিবেশ পছন্দ করে, প্রায়শই আসবাবপত্র, টয়লেট এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মধ্যে লুকিয়ে থাকে। সাধারণত, বাদামী-ব্যান্ডেড তেলাপোকাগুলোকে জার্মান তেলাপোকার তুলনায় কম দেখা যায়। কিন্তু তবুও এসব তেলাপোকা ঘর বাড়িতে আক্রমণ করতে পারে।

Oriental Cockroach (Blatta orientalis):

প্রাচ্যের তেলাপোকা গাঢ় বাদামী বা কালো এবং স্যাঁতসেঁতে, শীতল পরিবেশ পছন্দ করে। এগুলি প্রায়শই বেসমেন্ট এবং  ড্রেনগুলিতে পাওয়া যায়। এরা জার্মান তেলাপোকার মত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে না। কিন্তু সেটা না হলে কি হবে?  ঘর বাড়িতে উপদ্রব ঠিকই তাদের হতে পারে।

স্মোকি ব্রাউন তেলাপোকা (Periplaneta fuliginosa) :
এরা গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং উষ্ণ জলবায়ু পছন্দ করে। এদেরকে দক্ষিণ মার্কিন রাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানে পাওয়া যায়। স্মোকি ব্রাউন তেলাপোকা বাইরে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাঁচতে পারে না। এরা উচ্চ আর্দ্রতা পছন্দ করে বলে রাতে বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে উভয় জায়গায়ই চলাচল করে।

তেলাপোকা শরীর কেমন

এদের দেহ তিন খণ্ডে বিভক্ত—মাথা, ধড় ও উদর। ধড়ে তিন জোড়া পা ও সাধারণত দুই জোড়া পাখা থাকে। মাথায় দুটি লম্বা শুল রয়েছে,যেটা খুব অনুভূতিপ্রবণ। এরা ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। অনেক আগে পতঙ্গগুলো আফ্রিকা থেকে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

তেলাপোকার রক্তের রং কি

তেলাপোকার রক্ত বর্ণহীন। এদের রক্ত হিমোলিম্ফ নামে পরিচিত। হিমোলিম্ফ হল জল, লবণ, শর্করা এবং অন্যান্য পুষ্টির মিশ্রণ। এতে কোনও রক্ত কণিকা নেই, তাই এটি লাল বা অন্য কোনও রঙের হয় না।

তেলাপোকার উপকারিতা কতটুকু ?

তেলাপোকা নেই এমন কোনো বাসস্থান হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঘর থেকে এদেরকে দূর করার জন্য প্রতিদিন কত রকম চেষ্টাও চলে। যাবতীয় ময়লা আবর্জনা ও অন্ধকারে বাস, সহজে অভিযোজন করতে পারে বলে এরা এতগুলো বছর ধরে টিকে আছে।

তেলাপোকা সবাই চেনে। এক ধরনের ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচিত এই তেলাপোকা। অনেকেই তেলাপোকা খুব ভয় পায়। অনেকের আবার তেলাপোকা দেখলেই গা ঘিনঘিন করে। কিন্তু জানেন কি তেলাপোকার ও কিছু উপকারি দিক রয়েছে। অনেকের কাছে বিরক্তিকর ও ঘিনঘিনে এই পোকার উপকারিতার বিষয়টিও  আমাদের অজানা –

  • চীনে তেলাপোকা অন্যতম উপকারী একটি প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। কারণ তারা প্রতিদিন নষ্ট হয়ে যাওয়া গ্যালন গ্যালন খাবার ও অন্যান্য পণ্য সাবাড় করে দিচ্ছে। তবে এখানেই শেষ নয়। তেলাপোকার কাছ থেকে সবটুকু উপকারিতা নিংড়ে নিতে চীন নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। চীনের সানডং প্রদেশে গড়ে তোলা হয়েছে তেলাপোকার খামার। সেখানে চাষ করা হয় তেলাপোকা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে হাফিংটন পোস্ট খবরটি প্রকাশ করে। প্রতিদিন ভোরে একটি বড় পাইপের মাধ্যমে তেলাপোকার সেই কক্ষে সরবরাহ করা হয় খাবার, প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্য। যা খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করে তেলাপোকা। এসব বুদ্ধি আবিষ্কার করেছে দেশটির কৃষি প্রযুক্তি বিভাগ।
  • নষ্ট খাবার খেয়ে পরিবেশ রক্ষা করে তেলাপোকা।
  • তেলাপোকার মল উৎকৃষ্ট সার। তেলাপোকা যেখানে থাকে সেখানে অনেক মল জমা হয়। এসব মল গাছের গোড়ায় দিলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
  • তোলাপোকার মৃতদেহ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • গবেষকরা জানিয়েছেন, দুধের সঙ্গে ডিপলোপ্‌টোরা পাঙ্কটেটা বা পেসিফিক বিটল প্রজাতির তেলাপোকা মিশিয়ে খেলে মানুষের শরীরে দারুণ উপকার হতে পারে। এদের শরীরে থাকা প্রোটিন ক্রিস্টাল দুধের সঙ্গে মিশলে হয়ে উঠবে এক পুষ্টিসমৃদ্ধ সুপারফুড। আবার এই প্রকার তেলাপোকার দুধে রয়েছে ৯টি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। তেলাপোকা দুধকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে উপযোগী সুপারফুড হিসেবে গণ্য করছেন বিজ্ঞানীরা।

তেলাপোকা চাষ করা এক আফ্রিকানের গল্প – ‘মানুষ ভাবতো আমি পাগল’

তেলাপোকার কামড় দিলে কি কি ঘটে

১. কামড়ের স্থানে জ্বালাপোড়া করে।

২. ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হতে পারে।

৩. চুলকানি ও র‍্যাশ হতে পারে।

৪. তেলাপোকার লালারসের ক্ষতিকর অ্যান্টিজেন তাৎক্ষণিক আলার্জি ও শ্বাসকষ্ট ঘটাতে পারে।

তেলাপোকা  কি কি রোগ ছড়ায় জানেন কি?

তেলাপোকা বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে তেলাপোকা সালমোনেলা, স্ট্যাফিলোকক্কাস এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাস সহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াগুলোর আধার। তেলাপোকা পোলিওভাইরাসের মতো ভাইরাসকেও নিজের মধ্যে বহন করতে পারে।

খাবারে তেলাপোকা পড়লে কি হয় ?

তেলাপোকা তাদের বর্জ্য এবং লালা দিয়ে খাদ্যকে দূষিত করতে পারে যাতে ব্যাকটেরিয়া থাকে। আর এটা খাদ্যে বিষক্রিয়া, ডায়রিয়া এবং স্ট্যাফিলোকক্কাস সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

ভীতিকর বিষয় হল তেলাপোকা কিছু মারাত্মক রোগ বহন করতে পারে। সালমোনেলা টাইফি, যা টাইফয়েড সৃষ্টি করে। পোলিওমাইলাইটিস, যা পোলিও ঘটায়। তাছাড়া তেলাপোকা ডিসেন্ট্রিও ঘটাতে পারে। এটি এমন এক রোগ যা গুরুতর ডায়রিয়া সৃষ্টি করে এবং এর মধ্যে রক্তপাতও হতে পারে।

অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে” এর মানে কি?

শরৎচন্দ্রের তেলাপোকা নিয়ে এই উক্তিটি শোনেনি এমন মানুষ বোধ হয় হাতে গোনা। এই উক্তিটির মধ্য দিয়ে শরৎচন্দ্র সংকীর্ণমনা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু সমাজের প্রতি তীব্র কটাক্ষ করেছেন। লেখকের মতে, কোনোরকমে টিকে থাকার মধ্যে জীবনের সার্থকতা নেই। গৌরবের সঙ্গে টিকে থাকার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত। কিন্তু তৎকালীন সমাজ টিকে ছিল ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অনাচার ও অবিচারের বোঝা মাথায় নিয়ে। এতে কোনো গৌরব নেই। এজন্য লেখকের ভাষ্য ছিল তেলাপোকা হয়ে দীর্ঘকাল টিকে থাকার চেয়ে অতিকায় হস্তী হয়ে মরে যাওয়াও গৌরবের।

তেলাপোকার ছবি দেখতে কেমন?

এখানে কিছু তেলাপোকার png ছবি ও নরমাল তেলাপোকার পিক দেয়া হল ।

telapoka picture:


তেলাপোকার png ছবি:

 

তেলাপোকা সম্পর্কে মানুষ যা জানতে চায়, তার কিছু প্রশ্নোত্তর

তেলাপোকা ইংলিশ কি?

তেলাপোকা ইংলিশ হল cockroach।

তেলাপোকার বৈজ্ঞানিক নাম কি

তেলাপোকার বৈজ্ঞানিক নাম হল – Periplaneta Americana।

তেলাপোকা কোন পর্বের প্রাণী?
তেলাপোকা আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী

ঘরে তেলাপোকা উড়লে কি হয়?

ঘড়ের পরিবেশ নোংরা হয়। আর ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে তেমন কিছু হয় না। লোকমুখে যা প্রচলিত তা কুসংস্কার ।

তেলাপোকা কি চুল খায়

এটা খুব অবাক করা তথ্য হলেও সত্যি যে আমাদের মাথার চুল, দেহের মরা চামড়া খেয়েও তেলাপোকা বেঁচে থাকতে পারে।

তেলাপোকা কতদিন বাঁচে

সামগ্রিকভাবে, তেলাপোকা হল অত্যন্ত অভিযোজিত এক প্রকার পোকা। এরা বিস্তৃত আবাসস্থলে বেঁচে থাকতে পারে যতক্ষণ না তাদের খাদ্য, জল এবং আশ্রয়ের সংকট ঘটে। ডিম থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। তেলাপোকা এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং স্ত্রীরা অনুকূল পরিস্থিতিতে সারাজীবনে আটটি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।

মাথা ছাড়া তেলাপোকা কতদিন বাঁচে?

একটি আশ্চর্য ব্যাপার হয়ত আপনারা অনেকেই আজ প্রথম শুনবেন। সেটা হলো মাথা ছাড়া বা মাথা কাটা অবস্থায়ও তেলাপোকা বেচেঁ থাকতে পারে মোট ৯ দিন। তবে মাথা কেটে গেলে সেখানে পিঁপড়া, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্য কোনো তেলাপোকার আক্রমণে মাথাকাটা তেলাপোকা মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

তেলাপোকা কি নাপাক? ইসলাম কি বলে?

ইসলামে ক্ষতিকর, অপবিত্র, নোংরা ও অরুচিকর কীট-পতঙ্গ খাওয়া নাজায়েজ যেমন তেলাপোকা, ছারপোকা, মশা, মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি। কিন্তু এ জাতীয় কীট-পতঙ্গ পানি বা খাবারে পড়ে মারা গেলে ওই পানি ও খাবার নাপাক হবে না। কারণ, এগুলোর শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই। শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই এমন ছোট টিকটিকি খাবার বা পানিতে পড়ে মারা গেলেও ওই খাবার ও পানি পবিত্র থাকবে এবং খাওয়া জায়েজ হবে যদি সেগুলো বিষাক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকে।

তেলাপোকা মারার বিষ খেলে কি হতে পারে

তেলাপোকা মারার বিষ খেলে অকালেই যে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। কারণ, যে কোন ধরনের কীটনাশক এমন এক ধরনের বিষ যা খাওয়ার পর সেটা সাথে সাথে মানুষের কোষে কোষে ছড়িয়ে যায়।

বিড়াল তেলাপোকা খেলে কি হয়

সাধারণভাবে, বিড়ালদের তেলাপোকা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না। তেলাপোকা রোগ এবং পরজীবী বহন করতে পারে যা বিড়ালের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাছাড়া, কিছু তেলাপোকা কীটনাশক বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে থাকে। এগুলো খাওয়া বিড়ালদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তেলাপোকা মারা কি জায়েজ

তেলাপোকা মারা জায়েজ। কারণ, এগুলো হচ্ছে হাশারাত আল মুজিয়া, অর্থাৎ এমন পোকামাকড়, যেগুলো মানুষকে কষ্ট দেয় এবং ক্ষতি করে। সুতরাং, এ ধরনের কষ্টদায়ক পোকামাকড়, যেগুলো মানুষের ক্ষতি করে সেগুলো মারলে কোন গুনাহ হবার সম্ভাবনা নেই।

তেলাপোকা গায়ে উঠলে কি হয়?

তেলাপোকা গায়ে উঠলে বেশিরভাগ মানুষই অস্বস্তি বা ভয় অনুভব করতে পারে। তেলাপোকা বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বহন করতে পারে, যা মানুষের শরীরে সংস্পর্শে এলে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সরাসরি তেলাপোকার গায়ে ওঠা থেকে সাধারণত গুরুতর কোনো শারীরিক ক্ষতি হয় না। কিছু সম্ভাব্য সমস্যা নিম্নরূপ:

  1. আলর্জিক প্রতিক্রিয়া: তেলাপোকার লালা, মল, এবং শরীরের অংশগুলোতে উপস্থিত প্রোটিন অনেক মানুষের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এটি ত্বকে চুলকানি, র‌্যাশ, বা অন্য ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে।
  2. ইনফেকশন: তেলাপোকা বিভিন্ন জীবাণু বহন করতে পারে যা ত্বকে কাটা বা খোলা জায়গায় সংস্পর্শে এলে ইনফেকশন হতে পারে।
  3. মানসিক অস্বস্তি: তেলাপোকা গায়ে উঠলে অনেকেই মানসিকভাবে অস্বস্তি বা আতঙ্কিত বোধ করতে পারে, বিশেষত যারা তেলাপোকা ভয় পান।

যদি তেলাপোকা গায়ে ওঠে, তবে সাবান ও পানি দিয়ে ভাল করে ত্বক ধুয়ে নেয়া উচিত। কোনো ধরনের আলার্জি বা ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

তেলাপোকা ভাজিতে পড়লে কি করতে হয়?
তেলাপোকা ভাজিতে পড়লে তা একটি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তেলাপোকা বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এবং অন্যান্য প্যাথোজেন বহন করতে পারে যা খাবারে সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিতে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:

  1. ভাজিটি ফেলে দিন: তেলাপোকা যেহেতু জীবাণু বহন করতে পারে, তাই ভাজিটি ফেলে দেওয়াই সেরা উপায়।
  2. পাত্র এবং রান্নার স্থান পরিষ্কার করুন: তেলাপোকা যেই পাত্রে বা যেখানে পড়েছে, সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সাবান এবং গরম পানি ব্যবহার করে পাত্র ও রান্নার স্থান পরিষ্কার করা উচিত।
  3. রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত করুন: রান্নাঘরের অন্যান্য স্থানও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তেলাপোকা যেখানে প্রবেশ করতে পারে এমন জায়গাগুলোতে বিশেষ নজর দিন।
  4. পেস্ট কন্ট্রোল করুন: যদি তেলাপোকা রান্নাঘরে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে পেশাদার পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস ব্যবহার করে রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত করতে পারেন।
  5. খাবার ঢেকে রাখুন: রান্নার পরে এবং খাবার সংরক্ষণ করার সময় তা ঢেকে রাখুন যাতে তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকামাকড় খাবারে প্রবেশ করতে না পারে।
  6. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: রান্নার সময় এবং খাবার পরিবেশন করার আগে হাত ধুয়ে নিন। এটি খাবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করলে তেলাপোকা দ্বারা সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।

telapoka ki?

Telapoka holo Arthropoda porber prani. Er boigganic nam holo Periplaneta Americana